জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহে রাহুল স্মৃতি টি-২০ ক্রিকেট প্রতিতিযোগিতার উদ্ধোধন করা হয়েছে। বুধবার সকালে জাহেদী ফাউন্ডেশনের পৃষ্টপোষকতায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে খেলার উদ্ধোধন করেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। খেলা উদ্ধোধন শুরুতে জাহেদী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ভাষা সৈনিক মহুম জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া ও মরহুম হাসান শাহরিয়ার জাহেদী রাহুল স্মরণে একমিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম, জাহেদী ফউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য কাউয়ুম শাহারিয়ার হিজল ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশিদুর রহমান রাসেল। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন, জাহেদী ফাউন্ডেশন ও আমেনা খাতুন কলেজের অধ্যক্ষ মহিদুজ্জান, জাহেদী ফাউন্ডেশনের শাহতনু রেজা আসাদ, মাসুদুর রহমান রানা, ইউনুস আলী ও মানিক। উদ্ধোধনী খেলায় ঝিনাইদহ ক্রিকেট কাব ও আব্দুল লতিফ সরদার ক্রিকেট একাদশ অংশ গ্রহণ করেন। এ-খেলায় জেলার মোট ১২টি ক্রিকেট দল অংশগ্রহণ করবে। বুধবার ২০ জানুয়ারী থেকে শুরু হয়ে ১৫দিন ব্যাপি চলবে।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ হরিণাকুন্ডু উপজেলার বেল্টুর মোড় নামক স্থানে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মোটরসাইকেল ও পাখি ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পাখি ভ্যানের সাথে সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তায় ছিটকে পড়লে অপরদিক থেকে আসা একটি আলমসাধু মোটরসাইকেল আরোহীর বুকের উপরে উঠে যায়। মোটরসাইকেল আরোহীকে গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। নিহত নয়ন লস্কর(২১) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পরমানন্দপুর গ্রামের মোঃ খায়রুল লস্কর এর ছেলে। নিহত নয়ন লস্কর ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা আদালতের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ইশারত হোসেন খোকন সাহেবের সহকারি হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানা যায়।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহে লাইসেন্স ও ছাড়পত্রবিহীন ইটভাটায় অভিযান শুরু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বুধবার সকালে সদর উপজেলার গিলাবাড়ীয়া থেকে এ অভিযান শুরু করা হয়। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টীমের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোজিনা আক্তার ও যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাঈদ আনোয়ার। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৪ টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকাসহ নানা অভিযোগে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও ৪ টি ইটভাটায় ২৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, সকাল ১০ টা থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে চলবে বিকাল পর্যন্ত। দুপুর পর্যন্ত আমরা ৮ টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামীকাল শুক্রবারও এ অভিযান চালানো হবে।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার পিড়াগাতি গ্রামে আফতাব উদ্দীন স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে চক্ষু রোগীদের জন্য এ মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এসময় বাছাইকৃত ৬৫ জন চক্ষুরোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদাণ করা হয়। আফতাব উদ্দীন স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান জানান, ৬৫ জন রোগীকে চোখের ছানী অপারেশনের জন্য খুলনা চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়। যার সকল খরচ বহন করবে আফতাব উদ্দীন স্মৃতি ফাউন্ডেশন। সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন সমাজসেবক আলমগীর হোসেন।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের হরিণাকন্ডুুতে বাল্যবিবাহ দেওয়ার অপরাধে কনের বাবা ও বরের চাচাকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা এ সাজা দেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন-উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সাবেক নিত্যানন্দপুর গ্রামের কনের বাবা তোতা মিয়া ও প¦ার্শবর্তি চাঁদপুর ইউনিয়নের কন্যাদহ গ্রামের বরের চাচা আবদুল খালেক। এছাড়াও এ ঘটনায় বর লিটন মিয়াকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা জানান, সোমবার রাতে উপজেলার সাবেক নিত্যানন্দপুর গ্রামে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে বাল্যবিবাহ দেওয়া হচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় বাল্যবিবাহ দেওয়ার অপরাধে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে কনের বাবা, বরের চাচা ও বরকে জেল জরিমানা করা হয়।
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সিঙ্গি রায়গ্রাম মৃত শিল্প পল্লীর কারিগর পল্লীতে দেখা যায় কারীগরদের কেউ ভ্যানযোগে মাটি সংগ্রহ করছেন। কেউ কাঁদা প্রস্তুত করে চাকায় ফেলে হাতের কারুকাজে তৈরী করছেন নানা ধরনের জিনিসপত্র। পরিবারের মেয়েরা তাদের তৈরীকৃত কাঁচা কলস, ঠিলে, হাড়ি, চাড়ি, পায়খানার স্লাভ ও গ্রামের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পিঠা তৈরীর ছাঁচ রোদে দিচ্ছেন শুকাতে। আবার কাজের ফাঁকে কিছুক্ষন পরপর জলন্ত পাজাতে যে যখন সময় পাচ্ছেন জ্বালানীর যোগান দিচ্ছেন। শিবনগর গ্রামের মৃত কারিগর বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর, বালিয়াডাঙ্গা, অনুপমপুর, রায়গ্রাম, সিঙ্গিরবাজার, গোমরাইল, কাবিলপুরসহ আরও কিছু গ্রামে তাদের এ পেশার কারিগর রয়েছেন। তার নিজ গ্রামেই ৩০/৩২ টি পরিবার মৃত শিল্পের উপর জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা অল্প বয়সেই পারিবারিক ভাবে কাজ শিখে নেয়। মাটি দিয়ে জিনিসপত্র তৈরী করতে প্রথমে তারা বাড়ির নিকট থেকেই মাটি সংগ্রহ করে থাকেন। ফলে তাদের বাড়ির আশপাশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও এ সকল জিনিস তৈরীতে এটেল মাটি হলে ভাল হয়। পতিত জমি সব আবাদযোগ্য হয়ে যাওয়ার কারনে এ কাজে ব্যবহৃত মাটি এখন কৃষকের জমি থেকে কিনে আনতে হয়। তাদের প্রতিভ্যান মাটিতে খরচ হয় ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। তিনি আরো জানান, রোরো ক্ষেতের ঠান্ডা পানিতে বেশির ভাগ খেঁজুর গাছ মরে ইটভাটায় পুড়ে ছাই হয়েছে। আবাদি হয়ে যাওয়ায় আগের মত মাঠের মাঝখানে খেঁজুর গাছের ঘন বাগান আর নেই। তারপরও বসতভিটে অথবা রাস্তার পাশে, উচু অনাবাদি জমিতে,পুকুর পাড়ে যা খেঁজুর গাছ আছে। শীতকালে এ গাছগুলোর রস ও গুড় সংগ্রহের জন্য ঠিলে তৈরীতে তারা মহাব্যস্ততা থাকেন। এছাড়াও গ্রামে অনেক সময় মেলা বসে সেখানে ছাড়াও ধর্মীয় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য নানা ধরনের খেলনা রঙ ও নকসা করে বিক্রি করেন তারা। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের তৈরীকৃত জিনিসপত্র বাড়িতে বসেই বিক্রি করে থাকেন। তবে হাটের দিন বিভিন্ন বাজারে গিয়ে রাস্তার পাশে বসে ও বিক্রি করেন। কাবিলপুর গ্রামের কারিগর অসিত কুমার পাল জানান, তাদের তৈরী কাঁচা জিনিস গুলো প্রথমে রোদে ভাল করে শুকিয়ে শক্ত করে নিতে হয়। এরপর পাজায় আগুন তৈরী করে এগুলো পোড়াতে হয়। ভাল করে শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগে যায়। হাত থেকে পড়ে গেলে পুরাটা লোকসান হবে যে কারনে রোদে শুকানো, পাঁজাতে পোড়ানো ও বাজার জাত করনের সময় তাদের কে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বণ করতে হয় না। বর্ষার সময় তাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয় এবং বিক্রিও কমে যায়। অনেক সময় লাগাতর বর্ষায় তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। একই গ্রামের ললিতা রানী পাল জানান, সাধারনত কৃষকদের সবচেযে বড় আবাদের ফসল আমন ধান শীত মৌসুমেই কৃষকের ঘরে ওঠে। সুমিষ্ট খেজুর রসের মৌসুমও তখন। কৃষানীরা খেঁজুর রস ও গুড় দিয়ে তৈরী করে নানা রকমের পিঠা ফলে এ সময় পিঠা তৈরীর ছাঁচ বিক্রির হিড়িক পড়ে। একারনে মৃত শিল্পের কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন। তিনি আরো জানান, প্রতিটি রসের ঠিলে তৈরী করতে তাদের প্রায় ১৫ টাকা খরচ পড়ে যায় কিন্তু বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। একজন কারিগর সারাদিন কাজ করলে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত ঠিলে তৈরী করতে পারেন। তবে রোদে শুকাতে ও পোড়াতে আরও সময় কেটে যায়। এতে প্রতিদিন প্রত্যেকের অন্যান্য খরচ বাদে ৫’শ থেকে সাড়ে ৬’শ টাকা আয় হয়। তৈরীকৃত জিনিসপত্র পোড়ানোর জন্য তারা করাত কলের গুড়া ও কিছু জ্বালানী কাঠ মিশিয়ে ব্যবহার করেন। তবে বর্ষার মৌসুমে শুধু করাত কলের গুড়াই ব্যবহার করে থাকেন। এতে খরচ ও কম পড়ে। দিলীপ নামের অপর এক কারিগর জানান, এলাকাবাসী স্যানিটারী ল্যাট্টিনের জন্য তাদের তৈরীকৃত স্লাাভ ব্যবহার করছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিও প্রতিষ্ঠান জন সাধারনের মাঝে বিতরনের জন্য তাদের তৈরী পায়খানার স্লাভ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। চায়না রানী পাল জানান, তিনি ২৪ বছর ধরে এ কাজের সাথে সরাসরি জড়িত। পূর্বে প্রতিটি কৃষক পরিবারের রান্না ঘরে মাটির তৈরী বাসনপত্র ব্যবহার করতেন। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের ফলে এবং ষ্টিল শিল্পে তৈরীকৃত সৌখিন জিনিসপত্র ব্যবহার করছেন। এদিকে মাঠে মাঠে খেঁজুর গাছও কমে গেছে। তাই অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে জড়িয়ে গেছেন। তবে এখনও যে পরিমান খেঁজুর গাছ আছে কারিগর কমে যাওয়ায় শীত আসলেই তাদের নাওয়া খাওয়া থাকে না। তবে আগের মত না। ছোট বেলা থেকে অধিকাংশ পরিবারের সন্তানেরা এ কাজে তারা পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তাই পূর্ব পুরুষের পেশা তারা আকড়িয়ে ধরে আছেন।
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ ‘নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার হোন, সারাদেশে অব্যাহত খুন ধর্ষন ও নারী-শিশু নির্যাতন রুখে দাড়ান’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে ঝিনাইদহে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের ৩৬ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। দলটির জেলা শাখার আয়োজনে মঙ্গলবার সকালে শহরের পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহিলা ফোরাম ঝিনাইদহ জেলা শাখার সংগঠক রুবিনা খাতুন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বাসদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক কমরেড শফিকুর রহমান। আলোচক ছিলেন জেলা শাখার সমন্বয়ক এ্যাড. আসাদুল ইসলাম আসাদ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জেলা শাখার সভাপতি শারমিন সুলতানা। আলোচনা সভায় বক্তারা, নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ এবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন খান’র বিরুদ্ধে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর রাশেদুল ইসলামের যোগসাজসে চেয়ারম্যান হতদরিদ্র পরিবারগুলোর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। ঘর না পেয়ে পরিবারগুলো টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন হতদরিদ্র ১৩ টি পরিবার। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ইউপি সদস্য রাশেদুল ইসলামের মাধ্যমে চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন ওই ইউনিয়নের সাতগাছী গ্রামের তরিকুল ইসলাম, গোষ্টগোপাল, স্বপন, কিরন, মোস্তফা, বিকাশ, ধীরেন, শরিফুল, রাশেদা খাতুন, জীতেন, কুমারহাটি গ্রামের মতিয়ার, তেতলুবাড়ী গ্রামের বুদো ও রবিনের কাছ থেকে এক বছর আগে সরকারি জমি আছে ঘর নেই প্রকল্প’র ঘর দেওয়ার কথা বলে মোটর ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন ঘর দেওয়া তো দুরের কথা টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগি তরিকুল ইসলাম বলেন, এক বছর আগে ঘর দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা দাবী করে। আমি ঋণ নিয়ে ১৩ হাজার টাকা দিয়েছি। বছর পার হয়ে গেল আজও আমার ঘর দেওয়ার নাম নেই। টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমাদের গালি-গালাজ করে চেয়ারম্যান। আমার ঘর দরকার নেই আমি টাক ফেরত চাই। ভুক্তভোগি গোষ্টগোপাল বলেন, আমি সহজ-সরল গরিব মানুষ। কর্ম করে খাই, আমার কোনো জমি নাই, বাবার যেটুকু আছে তাতেই কোনো মতে আছি। চেয়ারম্যান আয়ুব আর মেম্বর রাশেদুল সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। ঘর না পেয়ে আমি আমার টাকা ফেরত চাইতে গেলে টাকা না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন খান বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নিই নি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। রাশেদুল মেম্বর নাকি আমার নাম করে টাকা নিয়েছে। কয়েকজন আমার কাছে নালিশ করার কারণে আমি জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্না রানী সাহা বলেন, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। তদন্তের ফলাফল এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে একজনের জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহের সাবেক দুই সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জমি উদ্ধার ও মালিকানা ফিরে পেতে প্রকৃত জমির মালিকরা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের হামদহ মৌজার ১৬৮৮ ডিপি খতিয়ানে মাঠ জরিপে যথাক্রমে ৩৭৪৮, ৩৭২৫, ৩৭২৪, ৩৭১৭ ও ৩৭০৮ দাগে সর্বমোট ১০৬.৮৬ শতক জমি রেকর্ড হয় হামদহ এলাকার মরহুম মকবুল হোসেনের নামে। মাঠ জরিপের পর ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট অফিসে ৩০ ও ৩১ ধারা শুরু হলে ঝিনাইদহ শহরের ভুটিয়ারগাতি, হামদহ ও কালিকাপুরের কতিপয় ভুমিদস্যু ও প্রভাবশালীরা উক্ত জমির রেকর্ড কেটে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সুত্রমতে তৎকালীন ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল ৩৭২৫ দাগে ৩৩ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক কালিকাপুরের আব্দুল গনি জোয়ারদারের ছেলে বাবুল জোয়ারদার নিজ নামে শুনানী কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এরমধ্যে ৩৭১৭ দাগের ১৬.৫০ শতক জমি বিনা নোটিশে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মোঃ মতিয়ার রহমান ভুটিয়ারগাতি গ্রামের আনসার আলী জোয়ারদারের ছেলে আবুল কালাম, আলমগীর কবীর, নজরুল ইসলাম ও ফিরোজ কবীরের নামে রেকর্ড করে দেন। এই মামলায় মকবুল হোসেনের ওয়ারেশ হিসেবে জনৈক বাবু নাকে এক ব্যক্তিকে বিবাদী দেখানো হয়েছে। ২০০৬ সালের ১৭ মে তারিখে ঝিনাইদহ পৌরসভা থেকে ১৭০৫ নং স্মারকে মকবুল হোসেনের যে ১২ জনের নামে ওয়ারেশ কায়েম সাটিফিকেট দেওয়া হয়েছে তাতে বাবু নামে কেও নেই। এখন প্রশ্ন উঠেছে কে এই বাবু ? ২০১৫ সালের ১৮ মে তারিখে ৫টি হাল দাগের জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করেন মকবুল হোসেনের ওয়ারেশগন। ৩১ ধারায় ৩৭২৫ সহ বেশ কিছু দাগের জমি ফিরে পায় মকবুল হোসেনের ওয়ারেশগন। একই ভাবে ৩৭০৮ দাগের ১৬.৩৭ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক কেটে হামদহ এলাকার শাহিনুরের স্ত্রী স্মৃতি খাতুন ও ওলিয়ারের স্ত্রী রিনা খাতুনের নামে রেকর্ড করে দেন, যার বাটা দাগ ৩৮১৬ ও ৩৮১৭। সবচে জালিয়াতির কান্ড ঘটানো হয়েছে ৩৭২১ দাগের ৩.৭৫ শতক জমি নিয়ে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে এই দাগের জমি জনৈক জাবেদ আলী মাঠ জরিপের আগে ৩ জনের কাছে বিক্রি করে যান। আর খাসে থাকে ৩.৭৫ শতক জমি। জবেদ আলীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারেশগন হাল ৩৭২১ দাগ থেকে উক্ত জমি রিনা ও খালেদার কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু ৩১ ধারায় রিনা ও খালেদার জমির রেকর্ড দেওয়া হচ্ছে মকবুল হোসেনের হাল ২১০৮ দাগ থেকে ৬ শতক। ৩১ ধারায় মকবুল হোসেনের ওয়ারেশগন উক্ত জমির রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করলে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মোঃ মতিয়ার রহমান ও বায়োজিদ মোস্তফা সব কেসগুলো আমলে নিয়ে নিস্পত্তি করলেও একটি কেস ০৩/০৯/২০১৫ তারিখে ভুমি মন্ত্রনায়ের চিঠির বরাত দিয়ে খারজি করে দেন। অথচ মকবুল হোসেনের পক্ষে রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয় ১৮/০৬/২০১৫। এদিকে মকবুল হোসেনের ওয়ারেশ হিসেবে তার সন্তান নজরুল ইসলাম ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট অফিসে ন্যায় বিচার পাবেন না আঁচ করতে পেরে আগেই তার মামলাগুলো যশোরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে স্থানান্তর করার জন্য আবেদন করেন। একই সাথে তিনি দুদকে আবেদন করেন। বিষয়টি ব্যাপক ভাবে জানাজানি হয়ে পড়লে সে সময় জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা এমডি আব্দুস সালাম জবাব চেয়ে ১০৭১ স্মারকে ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টম্বর তারেিখ পত্র দেন ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মতিয়ার রহমানের কাছে। নোটিশ দেন শুনানীর জন্য। শুনানীতে উভয় পক্ষ উপস্থিত হন। তবে রহস্যজনক কারণে শুনানীও করা হয়না। এদিকে সেটেলমেন্ট অফিসার মতিয়ার রহমান জোনাল অফিসের চিঠির জবাব না দিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করেন। মকবুল হোসেনের জমি কেটে অন্যের নামে দিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকা নিয়ে একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করে দিয়ে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যাবহার ও সেচ্ছেচারিতার নজীর স্থাপন করেন। এই মহাজালিয়াতির মাধ্যমে একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করিয়ে দেওয়া হলেও ওই দুই সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে তৎকালীন ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (বর্তমান অবসরে) মোস্তফা কামাল মুঠোফোনে জানান, আমিসহ অন্যান্য অফিসারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। সঠিক কাগজপত্র দেখেই আমরা রায় দিয়েছি। এখানে কোন স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করা হয়নি।
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহে ল্যাকটেটিং ও মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে নয় ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্র মহিলাদের পরিবর্তে মাতৃত্বকালীন ভাতার সুবিধা নিচ্ছেন বড়লোকের স্ত্রীরা। লাজ লজ্জা আর শরম ত্যাগ করে অগ্রনী ব্যাংক থেকে ছয় মাস পর পর এই ভাতা উঠয়ে নিচ্ছেন তারা। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ সব নারীদের সাজগোজ দেখে অনেক সময় অবাক হন। মাতৃত্বকালীন ভাতা যাদের পাওয়ার কথা তারাই থাকছেন উপেক্ষিত।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মহিলা বিষয়ক অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে মাতৃত্বকালীন ভাতা বড়লোকের স্ত্রীদের আঁচলে বাধা পড়ছে। অফিসের লোকজন টাকার বিনিময়ে দরিদ্র মহিলাদের বাইরে রেখে অর্থ বিত্তশালী পরিবারের স্ত্রীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন ।
যে কারণে চরম ভাবে বঞ্চিত জেলার হতদরিদ্র নারীরা। মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা মানা হচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে আইন মেনে অবস্থাশালীদের স্ত্রীদের দেওয়া হচ্ছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের একটি সুত্র জানায়, সরকার দেশেরে হতদরিদ্র গর্ভবতি মায়ের চিকিৎসা ও প্রসব পরবর্তী কোলের শিশু সন্তান যাতে মায়ের বুকের দুধ পান সে জন্য এ ভাতা দিয়ে থাকে।
কিন্তু জেলায় ২৪৩০ জনের যে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হয় তাদের মধ্যে অনেকেই আইন বহির্ভুত ভাবে এ ভাতা নিচ্ছেন। জেলা মহিলা বিষয়ক অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৬টি উপজেলায় ও পৌরসভায় দরিদ্র পরিবারের নারীদের সুবিধার্থে এ ভাতা দেওয়া হয়। দুই বছর মেয়াদী এ ভাতার টাকা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে ৬ মাস পর পর দেওয়া হয়।
এর মধ্যে কর্মজীবি ল্যাকটেটিং মাদার সহয়তা তহবিলের (ল্যাকটেটিং) আওতায় জেলাতে ২৪৩০ জনকে ল্যাকটেটিং ও ৭৩০৮ জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ল্যাকটেটিং ভাতা সদর পৌরসভায় ৮০০ জন, কালীগঞ্জে ৩৬০, কোটচাঁদপুরে ৩৬০, মহেশপুরে ৩০০, শৈলকূপায় ৩৬০ ও হরিণাকুন্ডুতে ২৫০ জনকে দেওয়া হয়। অন্যদিকে দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে সদর উপজেলায় ১৮৫৩ জন, কালীগঞ্জে ১১৯৯, কোটচাঁদপুরে ৫৫০, মহেশপুরে ১৩০৮, শৈলকূপায় ১৫২৬ ও হরিণাকুন্ডুতে ৮৭২ জনকে দেওয়া হয়। এ ভাতার টাকা পেতে হলে ভাতা প্রত্যাশীদের নিজ নিজ ইউনিয়ন ও পৌরসভার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
আবেদন পত্র পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করে জেলা মহিলা বিষয়ক অফিসে পাঠায়। সেখান থেকে বাছাই হয়ে পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চুড়ান্ত বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অন্ধকারে রেখে দরিদ্র নারীদের বাদ দিয়ে বড়লোকের স্ত্রীদের তালিকা ভুক্ত করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যার্থ হচ্ছে এই প্রকল্পটি। এজন্য বঞ্চিত হতদরিদ্র নারীরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যববস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জনান।
ঝিনাইদহ অগ্রনী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সদর উদ্দীন জানান, ব্যাংকে যে সব মেয়েরা সাজগোজ করে এই ভাতা তুলতে আসেন তাতে সঠিক ভাবে তালিকা করা হয় না বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক ভাবে প্রভাব থাকায় আমরা সচ্ছ ভাবে এই তালিকা করতে পারি না। এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফার রহমানের মোবাইল ০১৭১২৫৫৫১৪৭ নাম্বারে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।