খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে ৩দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ্
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী রাজস্ব আদায়ী উৎসব রাজ পূণ্যাহ্ উৎসব উদযাপিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে খাগড়াছড়ি শহরের জিরোমাইলস্থ মহালছড়ায় মং রাজবাড়ি প্রাঙ্গনে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘রাজপূণ্যাহ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ থেকে এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপি যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এবার কোন প্রকারের বড় ধরণের উৎসব আয়োজন এবং মেলা এবার হচ্ছেনা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে দিনব্যাপি পূণ্যাহ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
এতে মং সার্কেল চীফ (মং রাজা) রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
আলোচনা সভায় জাতীয় মহিলা সংস্থা’র জেলা কর্মকর্তা উথান চৌধুরীর সঞ্চালনায় এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক’র সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,তিনি কখনো নারী এবং পুরুষ উল্লেখ করেন নি। শেখ হাসিনার বারতা,নারী পুরুষ সমতা,একটা কথা আছে।নারী এবং পুরুষ আমরা সকলেই সমান। এখানে আমরা নারী কার্বারী,নারী হেডম্যান উচ্চারন করে বোধয় নারীদের ছোট করা হয়েছে।নারীরা কখনো ছোট না, নারীরা অনেক বড়, তারা এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম। সৃষ্টির সবকিছুই হচ্ছে নারীরা।নারীরা না থাকলে কোন কিছুই হবে। আজকে আমরা যারা এখানে উপস্থিত হয়েছি নারী হেডম্যান, নারী কার্বারী না বলে আপনারা এখানে সকলেই কার্বারী এবং হেডম্যান বলেই সম্বোধন করবো। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে যারা অভিভাবকস্থ করে আসছে।অর্থাৎ আমাদের পাহাড়ের যে সংগঠনগুলি আছে আগের বিচার ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থার ব্যাপারে মীমাংসায় যাওয়া উচিত।কারণ হেডম্যানরা কখনো হেডম্যানদের বিচার আচার করতে পারেনা, কার্বারীরা কখনো তাদের যে ঐতিহ্য, সেই ঐততিহ্য অনুসারে কাজ করতে পারেনা। আমাদের যে অভিভাবক আছে, তারাই কিন্তু নানানভাবে কাজ করছে। কাজেই আমাদের যে সমস্ত। অধিকার আছে, সেই অধিকাগুলো প্রয়োগ করতে পারছিনা।
তিনি বলেন, অধিকার প্রয়োগ করবার জন্যই আমাদেরকে ঐক্য থেকেই কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, হেডম্যানদের কার্যালয়কে সম্মান করতে হবে, রাজার কার্যালয়কে সম্মানিত করতে হবে। যখন তারা কাজ করবার সুযোগ পাবে। হেডম্যান-কার্বারীদের নিয়েই আমাদের অনেকগুলো মামলা নিষ্পত্তি করতে পারি। অনেককিছু নিষ্পত্তি করতে পারি। কিন্তু আজ আমাদের নিষ্পত্তি করবার সুযোগটি হারিয়ে ফেলেছি।
হেডম্যান-কার্বারীদের ভাতা বর্তমান সরকারই দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলেই এই ভাতার স্বীকৃত পেয়েছে।আপনাদেরকে মূল্য দেওয়া, আপনাদের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি পিপিএম সেবা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জেলার সহকারী পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম, খাগড়াছড়ি ও গুইমারা রিজিয়ন’র কমান্ডার, জিটুআই জাহিদ হাসান, ইউএনডিপির প্রতিধিসহ সুশীসমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জানাযায় দ্বিতীয় দিন শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বার্ষিক রাজস্ব খাজনা আদায় অনুষ্ঠানে মং রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী দিনব্যাপি ৮৮টি মৌজা প্রধান বা হেডম্যান এবং ৭শ ১জন পাড়া প্রধান (কার্বারী)-এর কাছে খাজনা ছাড়াও বিভিন্ন উপঢৌকন গ্রহণ করবেন।
রাজবাড়ি সূত্রে আরো জানাযায় তৃতীয় দিন (১২ ডিসেম্বর) নারী হেডম্যান ও নারী কার্বারীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংরক্ষিত মহিলা এমপি বাসন্তী চাকমা প্রধান অতিথি এবং মং রানী উখ্যেংচিং চেীধুরী সভাপতিত্ব করবেন।
এছাড়াও তৃতীয় দিনের আনুষ্ঠানিকতায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য শতরুপা চাকমা এবং ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
রাজপূণ্যাহ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য হিরনজয় ত্রিপুরা জানান, প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন পার্বত্যাঞ্চলের তিনটি সার্কেলে বিভক্ত বসতির সকল জনগণের কাছে একটি ভিন্নধর্মী আবেদন রাখে।
রাজপূণ্যাহকে ঘিরে ব্যাপক উৎসব আয়োজনও হয়ে থাকে কিন্তু করোনা মাহামারীর কারণে এবার এসমস্ত কাজগুলো ছাড়া সমাধান ৩দিনব্যাপি রাজপূণ্যাহ উদযাপিত হচ্ছে ।
সভায় মং রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘রাজপূণ্যাহ’ অনুষ্ঠান এবার অত্যন্ত ছোট আকারে করতে হচ্ছে। এ মহামারীর কারণে বিগত বছর উৎসব করতে পারেনি। আশা করি ভবিষ্যতে এই বিশ্ব থেকে করোনা মহামারী নির্মূল হলে বড় আকারে জাঁকঝমকপূর্ণভাবে করতে পারবো।এজন্য সবসময় জনগণ এবং সরকারসহ সকলের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি আরো বলেন, এবারের রাজপূণ্যাহ’র প্রত্যাশা স্বরুপ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সমুন্নত রাখা।
১৯০০ সালের শাসনবিধি (হিলট্র্যাক্ট ম্যানুয়েল) অধিকতর কার্যকর করা, হেডম্যান-কার্বারীদের সম্মানী বৃদ্ধিসহ ক্ষমতায়িত করা, হেডম্যানদের কার্যালয় নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
