বঙ্গবাজারে আগুন এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার আগুন লেগেছে এই মার্কেটে। গত কয়েকবছরে একাধিকবার আগুনের ঘটনা ঘটার পর সতর্কতা নোটিশ দেয়া হলেও তাতে কান দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
Advertisements
১৯৯৫ সালে বঙ্গবাজার একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায়। পরবর্তীতে নতুন আদলে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট। অপরিকল্পিতভাবে বাড়তে থাকে এর পরিধিও। বর্তমান বঙ্গবাজার চারটি ইউনিটে বিভক্ত- বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট, আদর্শ ইউনিট।
পরিদর্শক কমিটির বারবার সর্তকতা
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের একটি পরিদর্শক কমিটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবাজারের চারটি ইউনিটকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত করে বাজার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়।
একই বছরের মে মাসে বঙ্গবাজারের ত্রুটিগুলো তুলে ধরে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একটি নোটিশ দেয়া হয়, যাতে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। যদিও নোটিশের ৮ মাস পর ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফায় বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ৪টি ইউনিট পুনরায় পরিদর্শন করে মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পুনরায় ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ বলা হয়। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০০৬ এবং অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ মোতাবেক বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিটে অগ্নিপ্রতিরোধ, নির্বাপণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষকে পুনরায় নোটিশ ও নির্দেশ দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
গুলিস্তান ইউনিটে আগুন
২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের গুলিস্তান ইউনিটে একবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেসময় ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা করে সকাল ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন লাগার পর মার্কেট
কর্তৃপক্ষকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুই দফা নোটিশ দেয়া হয়।
নির্বিকার মার্কেট কর্তৃপক্ষ!
বারবার সতর্ক করার পরও ২০১৮ সালে গুলিস্তান ইউনিটে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ২০১৯ সালের মার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বঙ্গবাজার মার্কেট কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর পরিদর্শক কমিটির নির্দেশনা মানেনি। সরেজমিনে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতরে গলিগুলো খুবই চাপানো। নীচতলায় ইট-সিমেন্টের তৈরি পিলার থাকলেও পুরো মার্কেটটি টিন ও কাঠের তৈরি। মার্কেটে বিভিন্ন স্পটে অগ্নিনির্বাপণে এক্সটিংগুইশার থাকলেও কোথাও স্মোক/হিট ডিটেক্টর, ফায়ার হোজরিল, পাম্প, ফায়ার অ্যালার্ম বা অন্য কোনও ব্যবস্থা ছিল না।
বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে
দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে৷ এর প্রায় সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়৷
আগুনের সূত্রপাত
দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে৷ কীভাবে আগুন লাগলো সেটা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা অথবা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি৷
অতীতেও ভয়াবহ আগুন
এর আগে ১৯৯৫ সালে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে দোকানপাট পুড়ে যাওয়ার পর নতুন করে আবার দোকান বসানো হয়৷ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এ মার্কেটে চারটি ইউনিট মিলে প্রায় আড়াই হাজার দোকান ছিল বলে জানা যায়৷
মালামাল নিয়ে রাস্তায়
আগুন লাগার পর যে যেভাবে পেরেছেন দোকানের মালপত্র সরিয়েছেন৷ বঙ্গবাজার এলাকার আশেপাশের সড়কগুলো কাপড়ের বস্তায় ভরে গেছে৷
সমস্যা বাতাস
ঢাকার গুলিস্তান বঙ্গবাজারে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছে বারবার৷ সেখানে কিছুক্ষণ পরপর বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগুন নেভানোর পরেও সে জায়গায় আবারও আগুনের সূত্রপাত হয়েছে৷
সকল বাহিনীর সমন্বিত কার্যক্রম
ঢাকার গুলিস্তানের আগুন নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করছেন বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একাধিক দল৷ সকালে বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারের সাহায্যে পানি ছিটানোর কাজ করে৷
চোখের সামনে সব পুড়ে শেষ
বঙ্গবাজারের পাশের গলিতেই আহাজারি করতে দেখা যায় শাড়ির ব্যবসায়ী মোঃ সাব্বির আহমেদকে৷ তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার নতুন শাড়ি তুলেছিলেন তিনি৷ চোখের সামনেই আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷
জনতার ভিড়
বঙ্গবাজারের আশেপাশের এলাকায় হাজার হাজার জনতা ভিড় করে৷ যার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়৷
আগুন পুরোপুরি নেভার আগেই ভবনে প্রবেশ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা অভিযোগ করেন, আশেপাশের যে সকল ভবনে আগুন লেগেছে, সেসব ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই ব্যবসায়ীরা মালামাল বের করতে ভিতরে প্রবেশ করেছেন৷ এতে যে কোনো সময়ে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল৷
টাকার সিন্দুক উদ্ধার
বঙ্গবাজারের সাদমান গার্মেন্টস-এর স্বত্বাধিকারী মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, তার দোকানের একটি লকার উদ্ধার করা গেছে, এতে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ছিল৷ তবে টাকাগুলো অক্ষত আছে কিনা, সেটা তালা ভাঙার আগে বোঝা যাচ্ছে না৷
অক্ষত মালামাল উদ্ধারে চেষ্টা
গুলিস্তানের বঙ্গবাজার মার্কেটের নিচতলায় দেখা যায়, সেখানে আগুন নেভানোর সাথে সাথে দোকানের মালিক-কর্মচারী মিলে দোকানের শাটার ভেঙে মালপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছেন৷ তবে সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় কেউই অক্ষত কিছু উদ্ধার করতে পারেননি৷
সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি দোকানের মালিক, কর্মচারী, এলাকাবাসী সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন৷ যে যেভাবে পেরেছেন নিজেদের উদ্যোগে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন৷
অভিযোগ
গুলিস্তান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশেই বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগে৷ ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র জানান, খবর পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান৷ তবে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিস যদি ঠিকমতো কাজ করতো তাহলে এত দোকান পুড়ে ছাই হত না
ক্ষতিগ্রস্ত আশেপাশের ভবনও
গুলিস্তানের বঙ্গবাজার দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের মার্কেট৷ তার উপর সামনে ঈদ-উল-ফিতর হওয়ায় সেখানে কাপড়ের সরবরাহ অনেক বেশি ছিল৷ বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পাশের অ্যানেক্স ভবনসহ অন্যান্য ভবনেও আগুন লেগে যায়
পানির উৎসের অভাব
ফায়ার সার্ভিসের অর্ধশতাধিক গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নিলেও আশেপাশে বড় কোনো পানির উৎস না থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম বারবার ব্যাহত হচ্ছিল
ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা ২০১৯ সালে এই ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলাম এবং ব্যানারও লাগিয়েছিলাম৷ এরপর ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল৷ আমার করণীয় যা যা ছিল তা করেছি৷ এরপরেও এখানে ব্যবসা চলছিল৷’’
ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস
বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতি নিরূপণ করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান৷ তিনি বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যববসায়ীদের ক্ষতি নির্ধারণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে৷” মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী৷
রাজধানীর এক হাজার ৩০৫টি অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানের মধ্যে গুলিস্তানের বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটকে অধিক অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তবে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেট কর্তৃপক্ষের দাবি করে, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার কোনও ঝুঁকি নেই। কেন না মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে।
অথচ তখন ব্যবসায়ীরা বলেন ভিন্ন, তারা সব সময় ঝুঁকিতে ব্যবসা করেন। মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ডরা জানলেও মার্কেট কর্তৃপক্ষ তাদেরকে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র (এক্সটিংগুইশার) চালানোর কোনও ট্রেনিং দেয়নি।
অতঃপর ভয়াল থাবা!
৪ এপ্রিল মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা ভয়াবহ আগুনে আশপাশের মার্কেটসহ বঙ্গবাজারের চারটি মার্কেট পুড়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বিমান বাহিনী, সেনা, নৌ ও বিজিবির ফায়ার ফাইটার টিম ও ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কি পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে জানা না গেলেও মার্কেটগুলোতে সব মিলিয়ে মোট দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০ টি। তবে ঈদের আগে ঈদের জামা-কাপড় পুড়ে যাওয়ায় যেভাবে ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তার প্রভাব পড়তে পারে ঈদের কাপড়ের ব্যবসায়ও।
Post Views:৬৩
Advertisements
বর্ণমেলা প্রিন্টার্স এন্ড ক্রেস্টগ্যালারীআমাদের সেবা সমূহ:- ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক, মগ, মেডেল, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, ক্যালেন্ডার, পোস্টার, পিভিসি ব্যানার, ষ্টিকার সহ সকল প্রকার ছাপার কাজ করা হয় এবং সকল প্রকার সীল তৈরি ও যে কোন অনুষ্ঠানের গেঞ্জী, টিশার্ট প্রিন্ট করা হয়।
ঠিকানা: সিডষ্টোর বাজার, ভালুকা, ময়মনসিংহ, মোবাঃ ০১৭১৫২৫৩৩৮৫,
E-mail: bornamela03@gmail.com