গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের হাজী ছোট কলিম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে গভীর মনোযোগে গণিত পরীক্ষা দিচ্ছিল ৩৯ শিক্ষার্থী। পরীক্ষা শেষ হওয়ার তখনও প্রায় আধাঘণ্টা বাকি। এর মধ্যেই হলের ভেতর থেকেই ফেসবুক লাইভ শুরু করে শেখ রাকিব নামে এক পরীক্ষার্থী। লাইভের শুরুতেই পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গালাগাল করতে থাকে সে।
বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটলেও এটা জানাজানি হয় শনিবার। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা টানা ৭-৮ ঘণ্টা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পান। তাঁরা দেখতে পান, কেন্দ্রের ওই কক্ষে গার্ড দেওয়ার দায়িত্বে থাকা দু’জন শিক্ষকের কেউই ছিলেন না তখন। তাঁদের বহিস্কার করা হয়। কেন্দ্র সচিব আব্দুল হান্নান সজলকেও তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পরীক্ষা শুরুর আগে মোজার ভেতরে একটি স্মার্ট মোবাইল সেট নিয়ে হলে ঢুকেছিল আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক পরীক্ষার্থী। তার কাছ থেকে মোবাইল সেটটি নিয়ে লাইভ করে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শেখ রাকিব। ২ মিনিট ১৬ সেকেন্ড লাইভ করার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পরে ফেসবুকের ওই আইডি থেকে সেটা সরিয়েও ফেলা হয়। তবে কেউ একজন লাইভটি সেভ করে রাখেন।
মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে রাকিবের লাইভে দেখা যায়, পরীক্ষা বাদ দিয়ে সে জোরে জোরে কথা বলেই চলছে। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ক্যামেরার সামনে থেকে নিজেকে লুকানোর জন্য চেষ্টা করছে। কেউ কেউ আবার পরীক্ষার খাতা ক্যামেরার সামনে ধরে রাখছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মামুন আর রাকিব পূর্বপরিকল্পিতভাবেই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মোবাইল সেটটি নিয়ে হলে ঢোকে। দু’জনই পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকার শ্যাসর নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না থাকায় ধনুয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন করে তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়। স্থানীয়রা জানান, রাকিব বখাটে প্রকৃতির। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই সে বিয়ে করে ফেলে।
ওই হলের পরীক্ষার্থীরা জানায়, দুই বন্ধুর একজনও পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর তেমন কিছু লিখতে পারেনি। পরীক্ষার ২০-২৫ মিনিট সময় বাকি থাকতে মামুনের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে রাকিব সেলফি মোডে লাইভ শুরু করে। অন্য পরীক্ষার্থীরা জানায়, লাইভে এসে সে এমন সব অশ্নীল বাক্য ব্যবহার করেছে যা বলার মতো রুচি তাদের নেই।
পরীক্ষার হলের ভেতর লাইভ করার সময় বেশ কয়েকজন ফেসবুকে কমেন্টও করে। যেমন অমিয় সরকার নামে একজন লিখেছে- ‘এইটা পরীক্ষা’। শাকিল খান লিখেছে- ‘লাইভ ডিলিট করো’। মানহিসা নূর সিলভা লিখেছে- ‘সাব্বাস বেটা’। অদ্রিতা হায়াত নামে আরেকজন লিখেছে- ‘মামলা খাওয়ার রাস্তা ক্লিয়ার হয়েছে’।
পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও ওই ছাত্র কীভাবে স্মার্টফোন নিয়ে ঢুকল এমন প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী ওই দুই পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৯ নম্বর কক্ষের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক আফাজ উদ্দিন ও আমিনুল ইসলামকেও দায়িত্বে অবহেলার কারণে বহিস্কার করা হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল আমীন বলেন, কেন্দ্রে ঢোকার আগে একবার পুলিশ চেক করে। তারপর কক্ষের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক সার্বক্ষণিক নজরে রাখে। এ ছাড়া একজন ম্যাজিস্ট্রেটও থাকেন কেন্দ্রে। এত কিছুর মধ্যেও কীভাবে মোবাইল নিয়ে ঢুকে আবার লাইভ করেছে, এটা বুঝে আসে না। কতটা দুঃসাহসী হলে এমনটা করতে পারে!
