বর্বর ইসরায়েলি সৈনিকের গুলিতে সাংবাদিক নিহত
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সৈন্যরা আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যা করেছে। পশ্চিম তীরের জেনিনে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি অভিযানের সংবাদ সংগ্রহের সময় তাকে গুলি করা হয়। ৫১ বছর বয়সী শিরিন পেশাগত জীবনের প্রায় পুরো সময় বিশ্ববাসীকে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বর্বরতার খবর জানিয়েছেন। তার মৃত্যুটাও ইসরায়েলি বর্বরতার প্রমাণ হয়ে রইল।
খবরে প্রকাশ, বুধবার মধ্যরাত থেকে ইসরায়েলি বাহিনী জেনিনের ফিলিস্তিনি বসতিতে অভিযান চালায়। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায় সাংবাদিকদের বহনকারী একটি গাড়ি জেনিন শরণার্থী শিবিরের কাছের প্রথম মোড়টিতে এসে থামে। গাড়িতে অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে শিরিনও ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিকের পরিচয় জ্ঞাপনকারী ফ্ল্যাক জ্যাকেট, হেলমেট ও ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরিহিত থাকাবস্থায় শিরিনের মুখ লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। গুলিটি তার কানের একটু নিচে বিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপরও ইসরায়েলি বাহিনী গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখে। এ কারণে অন্যান্য সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে উদ্ধারের জন্য এগোতে পারেননি।
এ সময় আলী আল সামুদি নামে শিরিনের আরেকজন ফিলিস্তিনি সহকর্মী পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে উদ্ধার করে জেনিনের ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা শিরিনকে মৃত ঘোষণা করেন। আলী সামুদির অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছেন, শিরিন আবু আকলেহ ইসরায়েলি সন্ত্রাসের শিকার। আল-জাজিরা বলেছে, সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। এজন্য দায়ী ইসরায়েলি বাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আল-জাজিরা।
১৯৭১ সালে জেরুজালেমে জন্মগ্রহণকারী শিরিন সাংবাদিকতরা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন জর্ডানের ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশে ফিরে কয়েকটি মিডিয়ায় কাজ করার পর ১৯৯৭ সালে তিনি আল-জাজিরায় যোগ দেন।
শিরিন হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই ‘আইন-বহির্ভূত হত্যা’ ও ফিলিস্তিনিদের উপর অন্যান্য বর্ণবাদী অপরাধ বন্ধ করতে হবে।
এমনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফিকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক সালেহ হিজাজি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েল যে মৃত্যুময় অবস্থায় ফিলিস্তিনিদের আটকে রেখেছে, সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার ঘটনা তার রক্তাক্ত স্মারক।
প্যালেস্টাইন টিভির প্রতিনিধি ক্রিস্টিনা রিনাওয়ি বলেছেন, আমরা শিরিনকে হারিয়েছি কারণ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা ডাল-ভাত ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রতিটি ফিলিস্তিনি ও আরব সাংবাদিক কতটা বেদনার্ত বোধ করছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বিশেষত যারা শিরিনের সঙ্গে কাজ করেছে, তার উঁচু দরের পেশাদারিত্ব ও আচরণ দেখেছে, তাদের শোকের সীমা নেই।
