মোমিন তালুকদার, নিজস্ব প্রতিবেদক :
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর বাজারে “জননী স্টোর এন্ড বেকারী” নামক সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অপর একটি ঘরে লোকচক্ষুর আড়ালে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপজেলা সেনেটারি কর্মকর্তা বার বার নিষেধ করার পরও নোংরা পরিবেশে তৈরী হচ্ছে বিস্কুট, কেক, পাউরুটি সহ নানা বাহারি মুখরোচক খাবার!
আমরা কখনো কি কেউ ভেবে দেখেছি এই খাবারগুলো কোথায় তৈরি হচ্ছে? কী দিয়ে তৈরি হচ্ছে?
এসব খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই করার দায়িত্বে যারা আছেন তারা তাদের দায়িত্ব কতটা পালন করছেন?
স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এই বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর নোংরা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারি সামগ্রী!
কারখানার ভেতরে যেখানে তৈরি খাবার রাখা আছে সেখানেই ধুলোবালির মাঝে আটা, ময়দার ছড়াছড়ি! আশপাশে খোলামেলা যায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরি করা পণ্য!

জননী স্টোর এন্ড বেকারী বাস্তব চিত্র!
শ্রমিকেরা খালি পায়ে নোংরা জুতা পায়ে দিয়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও রয়েছে অপরিস্কার ও নোংরা ডাকনাবিহীন! পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভনভন করছে!
পণ্য ভাজার কড়াই সিমেন্ট বালি দিয়ে সংযোগ দেওয়া, পণ্য তৈরীর তেলগুলো পুড়তে পুড়তে পুড়া মবিলের মত কালো হয়ে যাওয়ার পরও পরিবর্তন করার কোন চিন্তা নেই কারিগরদের!
বাহারি মোড়কে পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি সামগ্রী বাজারজাত করা হচ্ছে এই বেকারি থেকে!
উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত না রাখার কারণে দেদারসে চলছে এই নোংড়া পরিবেশের বেকারিগুলোর কার্যক্রম!
বেকারির তৈরী করা পণ্যগুলো বিভিন্ন চায়ের দোকানে সরবরাহ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বেকারি সূত্রে জানা যায়, ফজরের নামাজের পরই কোম্পানির ভ্যানে বিভিন্ন অলিগলির জেনারেল স্টোর ও চায়ের দোকানে ওই সব পণ্য পৌঁছে দেন ডেলিভারিম্যানরা। বিভিন্ন চায়ের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক সাদা পলি প্যাকেটে ঝুলছে পাইরুটি, বাটারবন, কেকসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য। বেকারির এসব পণ্যের গায়ে মাঝে মাঝে প্রশাসনের চাপে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়!
কয়েকজন চা দোকানীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা গরীব মানুষ, চা-পানের সাথে বেকারির পণ্য বিক্রি করে সংসার চালাই, উৎপাদনের তারিখ দেখার সময় নাই, কাস্টমাররা তো আর এসব জিজ্ঞেস করে না, প্যাকেট থেকে কোনমতে তুলে চা বা কলা দিয়ে ওই সব বেকারি সামগ্রী কিনে খায়!
“জননী স্টোর এন্ড বেকারী” মালিক মোঃ আছাদুল ইসলাম (ভূইয়া) কে বেকারির সঠিক কাগজপত্র আছে কি না এ ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি তেমন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি।
উপজেলা সেনেটারি কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ত্রিশালে বেশ কিছু খাদ্য উৎপাদন বেকারি সরকারি নিয়মনিতী না মেনে খাদ্য উৎপাদন করে যাচ্ছেন। কিছু যায়গায় আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি।
আমি এই বেকারি পরিদর্শনে গিয়েছি, বেকারির মালিক এবং শ্রমিকদেরকে আমি অনেকবার সঠিকভাবে বেকারি চালানোর নিয়মকানুন বুঝিয়েছি এবং নির্দেশ দিয়েছি।উর্ধতন কৃর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সঠিক তদন্ত করে দ্রুত একটা প্রদক্ষেপ নিব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান এর কাছে বেকারির আশপাশের জনগণ ও সচেতন সহলের জোড় দাবী এই নোংরা, অসাস্থ্যকর পরিবেশের বেকারির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হউক।