ইমরান হোসাইনঃঃ রজব আলি সারা রাত খুক খুক করে কাশে । কিন্তু তার স্ত্রী সেই কাশির মধ্যে আরামে ঘুমিয়ে যায় । মাঝে মাঝে এমন কাশি কাশে কেউ মনে করবে রাত জেগে চোর পাহারা দিচ্ছে । শীতের দিনের গ্রামে পালা করে চোর পাহারা দেয় । সবার হাতে থাকে লাঠি আর লাইট । রজব আলির বাড়ির সামনে আসলেই সবাই দাত বের করে হাসি দেয় । মিনিট মিনিট বাদেই খুক খুক করে কাশি দেয় ।
কাশি আর গেল না । দিনের বেলায় এই কাশি কই যায় কেউ বলতে পাড়ে না। শুধু রাতের এই কাশির জন্য কোথাও রজব আলি বেরাতে যায় না। মানুষের বাড়িতে এত কাশি দিলে কেউ ভাল চোখে দেখবে না। রজব আলির বঊয়ের নাম ললিতা । শাশুড়ি আদর করে ললি ডাকে । স্বামী অবশ্য খুব মিষ্টি করে বলে লতা ।
ললিতা মাদ্রসা থেকে কামিল পাস । গায়ের রঙ কালো বলে ভাল পাত্র পাই নাই । অন্য তিন বোনের ভাল জায়গা বিয়ে হয়েছে তাদের বাবা জামাইদের জমি বেচে মোটর সাইকেল কিনে দিয়েছে । সেই বোন গুলো খুবেই সুন্দর । বিয়ে সময় জানতো না। যে রাতের বেলা আদানি উঠে । আমাদের গ্রামে শ্বাস কষ্ট কে আদানি বলে । ললিতা বিয়ের পড়ে কিছু দিন সমস্যা হয়েছিল । এখন আর সমস্যা নাই । মানুষ মাত্র ধীরে ধীরে সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেয় নিজেকে । ললিতা মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে ।
মাধ্যে রাতে জাউতলার বাজার থেকে গফুর মিয়া বাড়িতে যায় । লোকটা আগে ডাকাত ছিল । স্বাধীনতার পড়ে রক্ষী বাহিনী অনেক ডাকাত কে মেরে ফেলেছে । এই গফুর মিয়া খুবেই রহস্যময় মানুষ । মুক্তিবাহিনীর নাম শুনলে আগে নাকি ভয়ে পা কাপত ।
কেউ কেউ মনে করে ডাকাতি ছেরে রাজাকার যোগ দিয়েছিল । মুক্তি বাহিনী এমন পেঁদানি দিয়েছে সেই ভয়টা যায় নাই । অনেক বছর দেশে ছিল না । এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর বাড়ি ঘরে ফিরে এসে জাউতলা বাজারে কেরাসিনের দোকান দিছে । তার বউ খুব সুন্দরী কচি ডাবের মতো । গ্রামের তরুন ছেলেরা তার বউ কে নাম দিয়েছে রুপবান কন্যা । মেয়েটা আগে নরসিংদী যাত্রাতে অভিনয় করত ।
গফুরের সাথে লাইন মেরে চলে আসছে । গ্রামের সবাই জানে কিন্তু গফুর মিয়া কে সামনে কেউ বলে না।
মধ্যে রাতে সাইকেল চালিয়ে সে বাড়িতে ফিরে । সাইকে একটা টেন্ডেস্টার আছে । ছয় বল্ডের ব্যাটারি দিয়ে চালায় সাইকেলের সাথে । আব্বাস উদ্দিনের গান গুলো বেশী বাঁজায় ।
ললিতার স্বামীর কাশিতে ঘুম না ভাংলেও মাঝ রাতের ক্যাসেটে জন্য তার প্রায় ঘুম ভেঙে যায় । আর তখন ললিতা নিজেই বলে – বুড়া বেডা সখ কত । আল্লার খোদার ভয় নাই । তখন রজব আলি বলে আরে ঘুমাও মানুষ একটা কিছু নিয়ে বাচে । ললিতা তখন বলে
— ঘরে কি সুন্দর বঊ । কিন্তু মানুষের দিকে যে ভাবে তাকায় মনে হয় ডাহাইত !
রজব আলি বলে হ ঠিকেই কইছ । আমার বাবা কইছে সে আগে ভিন্ন দেশে ডাহাতি করত । প্রায় থানা পুলিশ তাকে খুজতে আসত । সে এখন লোক এখন ভাল হয়ে গেছে
— তুমি থাম । তোমার কাছে জগতের সবাই ভাল । মানুষ কোন দিন তার চরিত্র বদলাতে পাড়ে না। নামাজ রোজা করলে আমি বিশ্বাস করতাম । কিন্ত গফুর মিয়ার চোখ ভাল না । আমার নানী জান বলেছে যে পুরুষ মানুষ মেয়েদের শরীর দেখলে মিচকি হাসি দেয় সে হইল শয়তান । লজ্জা না পেয়ে সে আমারে দেখে একদিন চেয়ে চেয়ে সেই মিছকি হাসি দিয়েছে ।আমি হলাম তার মেয়ের বয়সী সে কিনা আমারে বলে ললিতা বানু ।
রজব আলি বলে – প্রতিদিন আমাদের এই গফুর মিয়া রে নিয়া সমস্যা হয় । তারে বহুদিন বলছি আমার বাড়ির সামনে আসলে গান বাজনা বন্ধ করে দিতে। আমার বউ নামাজ কালাম পড়ে । কিন্তু সে মাঝে মাঝে ভুলে যায় ।
শীত গিয়ে বর্ষা কাল রজব আলী আর ললিতার সুখের সংসার ।
রাতের বেলা গফুর সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে । গফুর ভাল করে খেয়াল করল রজব আলির কাশের কোন শব্দ নাই । সাইকেল থেকে নামলো । ক্যাসেট প্লেয়ার বন্ধু করে কিছু ক্ষণ চুপ করে রইল । তার পর টিপ টিপ পায়ে গায়ের চাদর টা মাথায় দিয়ে রজব আলির বাড়িতে আসলো । সুনসান উঠান । গয়াল ঘর দেখল গরু শুয়ে আছে । চিন্তায় পড়ে গেল । গত দুই বছরে কোন দিন রজব আলির কাশি বন্ধ হয় নাই । মিনিটে মিনিটে কাশি দেয় । বাঁশের বেরার ফাক দিয়ে চুকি দিয়ে দেখে ললিতা ঘুমাইতেছে । তবে পরনে শুধু ছায়া আর ব্লাউজ ।
গফুরের চোখ থেকে আর পলক পড়ে না। কি মায়া ভরা মুখ । গালের মধ্যে চুল গুলো এসে পড়েছে । মনে হচ্ছে কবুতরের বাচ্চা একা একা শুয়ে আছে ।
ভাল করে বাড়ির চার দিক দেখে । না কেউ কোথাও নেই । রজব আলী নাই তার মা নাই । বাড়িটা একদম খালি । চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ ।
গফুর ধীরে ধীরে বাঁশের বেড়ার গুনার তারের বাঁধ গুলো খুলতে থাকে । আকাশের মেঘের গর্জন শুরু হয় , বিজলী চমকাতে থাকে । গফুর বেরা ফাক করে খুব ধীরে ঘরে ডুকে যায় । কুপি বাতির সলতাটা হাতে নিয়ে ললিতার মুখ টা ভাল করে দেখে । ললিতার শরীর টা দেখে । একটা তৃপ্তির হাসি দেয় গফুর মিয়া । যেন একটা ঘুমন্ত হরিন আজ জঙ্গলে বাঘ একা পেয়েছে । খুব ধীরে ঘরের গামছা দিয়ে ললিতার হাতটা বাধে ।
মুখ টা বাধতে নিলেই ললিতা চোখ মেলে তাকিয়ে চিৎকার দিতে চায় । তখন কিন্তু গফুর তার বুকের উপরে উঠে বসেছে । কিছুতেই আর ললিতা শব্দ করতে পাড়ে না।
ললিতার হাত বাঁধা মুখ বাঁধা । কুপি দাউ দাউ করে জলছে । আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছে । বর্ষার আকাশ যেন বন্যা বয়ে দিবে । ললিতার শরীর থেকে কাপড় খুলে নিয়ে হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে গফুর তার উপর । কোন দোয়া মায়া নেই যেন একটা হায়েনা শরীর থেকে মাংস ছিরে ছিরে খাচ্ছে । ধর্ষণ শেষ করে মাটির কলসি থেকে পানি ঢেলে গফুর মিয়া পানি খায় । ললিতা ঠোঁট থেকে রক্ত পড়তে থাকে ।
ললিতার পড়ার কাপড় টা বিছানায় ছিল । গফুর হাতে নিয়ে ললিতার গলায় খুব জুড়ে একটা প্যাচ দেয় । চোখ গুলো চেয়ে থাকে গফুরের দিকে । ললিতা শেষ নিঃশ্বাস বের হয়ে যায় । ডাকাত গফুর বুকের মধ্যে হাত দিয়ে নিশ্চিন্ত হয় ললিতা মারা গেছে । ললিতার কানের হাতের গলার জিনিস গুলো খুলে । কাঠের আলমারি খুলে কিছু টাকা পায় সেই গুলো নেয় । ললিতার হাতের গামছ টা খুলে বেরারে ফাক দিয়ে গফুর বের হয় । মাথায় গামছটা দেয় যাতে বৃষ্টির পানি না পড়ে ।
ললিতার মরা দেহ টা চকীর উপর পড়ে থাকে । সাইকেল চালাতে চালাতে গফুর ডাকাত বাড়ির দিকে যায় ।
ললিতার স্বামী রজব আলী তার মাকে নিয়ে বোনের বাড়ি গিয়েছিল । বোনের বাচ্চা হবে তাই । মাকে রেখেই চলে আসতো । কিন্তু বোনের আবস্তা ভাল না । তাই তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয় । ভোর বেলায় তার বোনের একটা মেয়ে জন্ম হয় । ভাগ্নী কুলে নিয়ে রজিব আলী বলে মা দেখ ভাগ্নি তো আমাদের ললিতার মতো হইছে ……………………………………… ।। চলমান ।।