নিজস্ব প্রতিবেদক: ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর বাজারের পাশে হবিরবাড়ী ইউনিয়ন সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে পাশ করে বের হয়ে যাচ্ছে এই স্কুল থেকে। স্থানীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে এসব ছেলেমেয়েরা। কেউ কেউ স্কুল কলেজের শিক্ষক, কেউ আইনজীবী, কেউ পুলিশ অফিসার, কেউ কেউ ব্যবসায়ী আবার অনেকে রাজনীতিবিদ হয়েছেন। অন্যদের মতো এসএসসি পাশ করে বের হয়েছেন মো. আশরাফুল আলম ২০০০ সালে এ বিদ্যালয় থেকেই। তবে তার জীবনযাপন অন্যদের থেকে একটু আলাদা। অন্যদের মতো ধনীর ঘরের দুলাল ছিল না সে, একেবারে সাধারণ পরিবার থেকেই উঠে আসে সে। তারপরও বরাবরের মতো এ বিদ্যালয় থেকেও সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে বের হয় সে। তারপর গাজীপুর জেলার একটি প্রাইভেট কলেজ থেকেও ভালো রেজাল্ট নিয়ে বিজ্ঞান গ্রুপে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করে ২০০২ সালে। তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময়টা কম লম্বা নয়, কমপক্ষে ৫-৭ বছর। এই লম্বা সময়টা একেবারে সহজভাবে পার হয় নাই আশরাফুল আলমের। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা সহ সব কিছুর জন্যে। রেজাল্ট ভালো হওয়ার কারণে প্রথম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পেয়ে যায় সে। কখনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কখনো বা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় টিউশনী করেছেন । এগুলো করেও নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা আর পড়াশুনা করে প্রথম শ্রেনী নিয়ে বিএসসি অনার্স পাশ করেন তিনি। এভাবেই পার করতে করতে মাস্টার্সে থিসিসসহ প্রথম শ্রেনীতে ২য় স্থান (জৈব রসায়ন) অধিকার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করেন। উল্লেখ্য যে, মাস্টার্সের থিসিসে (গবেষণা) ভালো করার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় থেকে দেওয়া পুরষ্কার সরূপ ফেলোশিপ গ্রহণ করেন ২০১০ সালের। তারপর, ঢাকার দিকে যাত্রা। বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর রসায়ন বিভাগে ভর্তি হয়ে শুরু করেন এম.ফিল. ডিগ্রীর পড়াশুনা আর গবেষণা কাজ। এখানেও আগের রেজাল্ট ভালো থাকার সুবাদে বুয়েটের আবাসিক হলে থাকার সুযোগ হয় তার। আবাসিক হলে থেকে রাতদিন পড়াশুনা আর ল্যাবে গবেষণার কাজ করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে শেষ করেন মাস্টার অব ফিলোসফি (এম.ফিল.) ডিগ্রী। এই সময়েও তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে পড়াশুনা আর উচ্চতর গবেষণা করার জন্যে। পড়াশুনার পাশাপাশি ঢাকার কয়েকটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট টাইম শিক্ষকতা করেন তিনি। উল্লেখ্য যে, এম.ফিল. থিসিসের (গবেষণা) কাজেও ভালো করার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় থেকে দেওয়া পুরষ্কার সরূপ ফেলোশিপ গ্রহণ করেন ২০১২ সালে। এরই মধ্যে তিনি ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছিলেন লেকচারার/ প্রভাষক হিসেবে যোগদানের জন্য। কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা ইতিমধ্যে অন্য এক ব্যবস্থা করে রেখেছেন তার জন্যে। তিনি জাপান থেকে জাপান সরকারের মনবুশো/MEXT স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হওয়ার সকল কাগজপত্র হাতে পেয়ে যান তার বুয়েটের এম. ফিল. ডিগ্রী শেষ হওয়ার আগেই। এরই ধারাবাহিকতাই ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে ডক্টরেট ডিগ্রীর পড়াশুনা শুরু করেন জাপানের ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এভাবেই জাপান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কৃতিত্বের সাথে মেডেলসহ রসায়ন বিজ্ঞানের উপর ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং (Doctor of Engineering in Chemistry) ডিগ্রী শেষ করেন।
ড. মো. আশরাফুল আলম সম্পর্কে আরও কিছু কথা না বললেই নয়। তিনি ছোটবেলায় মা বাবা কে হারান। তারপর থেকে নানা নানী আর মামাদের বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেন। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু পেয়েছেন, অনেক কিছু শিখেছেন। তাই শিক্ষকদেরকে তিনি অনেক সম্মান করেন। ড. মো. আশরাফুল আলম পিতাঃ মরহুম মোঃ দুলাল মিয়া এবং মাতাঃ মরহুমা সমতা বেগম, গ্রামঃ হবিরবাড়ী ( মাওরাচালা), পোস্টঃ সিডস্টোর বাজার, উপজেলাঃ ভালুকা, জেলাঃ ময়মনসিংহ। পিতামাতা ছোট্টোবেলায়ই মারা যাওয়ায় হবিরবাড়ীর মাওরাচালা গ্রামে মামার আশ্রয়ে থেকেই লেখাপড়া করেছে। ড. মো. আশরাফুল আলম জানান “আমি আমার জীবনে আমার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা, আদর স্নেহ আর সহযোগিতা পেয়েছি তা কোনদিনই বলে শেষ করা যাবে না, তা কোনদিনই শোধ করা যাবে না। আমি তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ”। তিনি আরও বলেন, “সব সময় শ্রদ্ধা করি শিক্ষক সমাজসহ সকল পেশার ভালো সকল লোককে। শিক্ষকতা পেশা একটা আলাদা পেশা। আমার মতে এ পেশাকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না”।
শিক্ষক সমাজকে ভালোলাগা আর ভালোবাসার কারণেই নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় দেখার স্বপ্ন কাজ করে সেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছাত্র থাকা অবস্থা থেকেই। সেই কারণেই জাপানের মতো দেশ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে জাপানে বা অন্য কোন দেশে না গিয়ে, দেশের টানে, দেশের কল্যাণে কাজ করার ইচ্ছা নিয়ে, দেশের ছেলেমেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে আর স্বপ্ন দেখাতে চলে আসেন নিজের দেশে। দেশে এসেই নিজের মেধা আর যোগ্যতায় যোগদান করেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। অর্থাৎ ড. মোঃ আশরাফুল আলম এখন আছেন ঢাকার উত্তরাতে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি (IUBAT) এর রসায়ন বিভাগে, সহকারী অধ্যাপক/Assistant Professor হিসেবে