অমর একুশে বইমেলা থেকে শ্রাবণ প্রকাশনীকে দুই বছর নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় সমালোচনার মুখে সাংবাদিকদের মূর্খ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা লেখাপড়া জানে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। শ্রাবণ প্রকাশনী নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সঠিক দাবি করে নিজের অনঢ় অবস্থানের কথাও জানান তিনি।
বই মেলায় দুই বছরের জন্য শ্রাবণ প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে চলছে নানা সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি চলছে সমালোচনার ঝড়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘এসব সমালোচনায় কিছু আসে যায় না। এসব সোশ্যাল মিডিয়ার এরা লেখাপড়া জানে না, লেখাপড়া করে না এ জন্যই এমন করছে।’
এ সময় ব-দ্বীপ প্রকাশনী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তুমি আসো, তোমাকে দেখাবো যে নারী সম্পর্ক বিষয়টা নিয়ে ওই বইটাতে (ব-দ্বীপ প্রকাশনীর প্রকাশিত বই) হযরত মোহাম্মদ (স.) কে কী কুৎসিত চরিত্রে অংকন করেছে। আমি এটা সবটা বললে তাকে (প্রকাশককে) মেরে ফেলবে। ’
বলা হচ্ছে আপনি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বইমেলাকে বিতর্কিত করেছেন- এমন প্রসঙ্গ তুলতেই শামসুজ্জামান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘জ্বী না, ওরা বইমেলাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, ওরা একটা সেবোটিয়াস, বইমেলাকে ধ্বংস করার জন্য ওরা প্রপাগাণ্ডা করছে। রবিনের (শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী) কাজই এটা, প্রতি বছর একটা নাটক করে বইমেলাকে ধ্বংস করার জন্য।’
ব-দ্বীপ প্রকাশনী বন্ধের পর আরো অনেক প্রকাশক এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতিও প্রতিবাদ জানিয়েছে, তাদেরও নিষিদ্ধ করা হবে কিনা জানতে চাইলে শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘আর কাউকে নিষিদ্ধ করা হবে না। ’
বাংলা একাডেমি কাউকে নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার রাখে না- এমন প্রসঙ্গে শামসুজ্জামান খান দাবি করেন, ‘এটা মোটেই ঠিক না। ’
এ সময় তিনি এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘বলতো, ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদের নাম কী? এরপর নিজে নিজেই বলতে থাকেন, তোমার নাম কী?…। ছি… ছি… ছি। পড়াশুনা করে না।’ এ সময় কিছুটা ইতস্তত হয়ে পড়েন তিনি।তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়াসহ আরো কিছু প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং এই প্রতিবেদককে এড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠে চলে যান।
শামসুজ্জামানের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে মন্তব্য চাইলে, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বইমেলাটাও বাংলা একাডেমির প্রধান কাজ না, বাংলা একাডেমি এখন পুলিশের কাজ করছে। বাংলা একাডেমির গঠনতন্ত্রে তাদের কোনো বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয় নাই। কোনো পাঠক ইচ্ছা করলে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। আদালত বই বাজেয়াপ্ত করবে বা কোনো প্রকাশককে শাস্তি দিতে পারে। বাংলা একাডেমি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে, যা তারা কখনোই করতে পারে না।’
এ বিষয়ে শ্রাবণ প্রকাশনীর আদালতের শরণাপন্ন হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত সোমবার বইমেলায় মেলায় স্টল বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদন ফরম তুলতে গেলে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসানকে নিষিদ্ধের বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন রবিন। এরপর বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেন বইপিপাসুরা।
গত বছর অমর একুশে বইমেলায় হযরত মোহাম্মদ (সা.)কে বিদ্রুপ করে লেখা একটি বই ছাপানোর দায়ে ব-দ্বীপ প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ করে বাংলা একাডেমি। পরে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭-এর ২ ধারায় শাহবাগ থানা পুলিশের দায়ের করা মামলায় ব-দ্বীপের প্রকাশক শামসুজ্জামান মানিক গ্রেফতার হন।
শ্রাবণ প্রকাশনী নিষিদ্ধের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গণমাধ্যমকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জানিয়েছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র- টিএসসিতে প্রকাশক শামসুজ্জামান মানিককে গ্রেফতার করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় রবিন আহসানের শ্রাবণ প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।